Originally posted in .bdnews24.com on 7 August 2018
বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিরাপত্তা বিধান ও অধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রস্তাবিত বিলটি এখনও সংসদে উত্থাপিত না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে এক সভায়।
ওই সভায় আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা আদিবাসী অধিকার রক্ষায় প্রস্তাবিত বিলটি আগামী সংসদ অধিবেশনে পাস করতে ‘লড়াইয়ের’ ডাক দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিসার্চ অ্যান্ড কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এই আলোচনা সভায় জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষরের দাবিও ওঠে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের দুদিন আগে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ইমপ্লিমেন্টেশন অফ বাংলাদেশ : ইন্ডিজেনাস পিপলস রাইটস অ্যাক্ট’ শিরোনামে এই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙামাটির সাংসদ উষাতন তালুকদার।
ওয়াকার্স পার্টির সংসদ সদস্য বাদশা বলেন, “আদিবাসী বিষয়ক অধিকার রক্ষায় সংসদীয় ককাস দুই বছর আগে যে বিলটি প্রস্তাব করেছিল, তা এখনও কোনো সংসদীয় অধিবেশনে উত্থাপন করা যায়নি।
“বলা হচ্ছে, প্রচলিত আইন অনুসারে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও অধিকার আদায় সম্ভব। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, প্রচলিত আইনে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা হচ্ছে না।”
আদিবাসীর সংজ্ঞা, পরিচয়, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ভূমি-বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিকার, স্বশাসন ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার, ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকারসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে সংসদীয় ককাসের বিলে।
বাদশা বলেন, “ পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ রূপে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সমতল, পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধানও করা যাচ্ছে না।”
আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ এখনও জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক কনভেনশনের সাইন করেনি। আমার মতে, এই কনভেনশনে সাইন করা উচিৎ এখন।”
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংসদীয় ককাসের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।
তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন ৩৫টি ভাষার ৫৪টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস করছে, যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
আদিবাসী বিষয়ক নানা সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি কয়েকটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেন মেজবাহ কামাল।
তার মধ্যে রয়েছে- সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখতে হবে; উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ কোটা বরাদ্দ রাখতে হবে; পাঁচটি নৃতাত্ত্বিক ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি সমস্যা নিরসনে স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
আলোচনা সভায় সাংসদ কাজী রোজী, সাংসদ হাজেরা সুলতানা, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এমপি, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ন্যাশনাল কোয়ালিয়েশন ফর ইন্ডিজেনাস পিপলের নমিতা চাকমা বক্তব্য রাখেন।
চলতি বছর ‘আদিবাসী নাগরিক অভিবাসন ও স্থানান্তর’ প্রতিপাদ্যে আদিবাসী দিবস উদযাপিত হবে পৃথিবীর নানা দেশে। আগামী ৯ অগাস্ট ঢাকায় আদিবাসী বিষয়ক সংগঠনগুলো এই দিবসটি উদযাপন করবে।